Edit Content
Satarkul Branch
Uttara Branch (Junior Campus)
Uttara Branch (Senior Campus)

Reasons why expatriate students are our assets (প্রবাসী শিক্ষার্থীরা যে কারণে আমাদের সম্পদ) by Samakal

প্রবাসী শিক্ষার্থীরা যে কারণে আমাদের সম্পদ

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ইদানীং বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনপ্রিয় গন্তব্য। অনেকেই বিশ্বমানের পড়াশোনা আর উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন। ইউনেস্কো প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২৩ সালে দেশ থেকে ৫২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বিদেশে গিয়েছেন। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজারের কিছু বেশি। তার আগের বছর গিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার শিক্ষার্থী। অর্থাৎ প্রতিবছর সংখ্যাটি বাড়ছে।

সব শিক্ষার্থীই যে শুধু উন্নত পড়াশোনার জন্য দেশ ছাড়ছেন, তা নয়। দেশে পড়াশোনার পর চাকরির অনিশ্চয়তা, পড়াশোনার সময়ে খণ্ডকালীন কাজের অভাব, যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়া, চাকরিক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতাও কারণ হিসেবে কাজ করছে। তবে অনেকেই নিজের মেধা ও যোগ্যতাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে বিদেশযাত্রাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর হার্ভার্ড, ইয়েল, প্রিন্সটন, কর্নেলের মতো বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানির মতো দেশ। এসব দেশে পড়তে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই সেসব দেশের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা আর্থসামাজিক নিয়মনীতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যান। তারা দেশে ফিরে আসার পর এই গুণগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান।

উন্নত বিশ্বের এসব দেশে শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বিশ্বের নানান দেশ থেকে আসছেন। ফলে তাদের সঙ্গে মেশা, তাদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
দেখা যায়, বিশ্বের প্রভাবশালী বেশির ভাগ সংস্কৃতির সঙ্গেই এ সময় তাদের পরিচয় হয়। এতে তাদের মেধা-মনন, চিন্তা ও আচরণে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। এ সময় অনেকেই দেশের বাইরে রয়ে যান; নিজের মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে বৈশ্বিকভাবে কাজে লাগান। অনেকেই আবার দেশে ফিরে এসে এখানে কাজ করতে চান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম এমনই এক ব্যক্তিত্ব। বিশ্বখ্যাত এই পদার্থবিজ্ঞানী কেমব্রিজ, ক্যালটেকের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণার পাট চুকিয়ে ১৯৮৪ সালে দেশে ফিরে আসেন।
তবে যারা দেশের বাইরে রয়ে গেছেন, এমন মানুষও দেশের বিকাশে কাজ করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছেন; দেশ বা শহরভিত্তিক আলাদা কমিউনিটি তৈরি করছেন। দেশ থেকে যাওয়া নতুন শিক্ষার্থীরা তাদের কাছ থেকে ওই দেশ সম্পর্কে জানছেন, শিখছেন ও পরামর্শ নিচ্ছেন। অনেকে সেই দেশে চাকরি বা ব্যবসা করছেন; সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছেন– বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর পুরো পরিবার দেশেই রয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থী খণ্ডকালীন কাজ করে হলেও দেশে থাকা তাঁর পরিবারের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে। এমনকি যারা স্থায়ীভাবে পরিবার-পরিজনসহ দেশের বাইরে থাকছেন, তাদের জন্য এ সুযোগ আছে। দেশে বিনিয়োগ করা ও অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করেছে সরকার। ফলে দেশ যেমন তার প্রবাসীদের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারবে; অন্যদিকে প্রবাসীরাও দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ পাবেন।
তবে, অনেক বিশেষজ্ঞই বিদেশে শিক্ষার্থীদের এই পড়তে যাওয়ার চিত্রকে কিছুটা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। তারা দেখাতে চেয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব শিক্ষার্থী অনেক দেশেরই আয়ের অন্যতম উৎস। ২০২০-২১ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবদান ৪২ বিলিয়ন পাউন্ড। দেশটির প্রতি একজন স্থানীয় শিক্ষার্থীর বিপরীতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫। এর একটি বড় অংশই দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আসা। আবার ওই একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবদান ৩৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এসব শিক্ষার্থী দেশটিতে ৩ লাখ ৩৫ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। একই বছর কানাডার অর্থনীতিতে ২২.৩ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের অবদান রেখেছেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা।

দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া এবং সেখান থেকে ফিরে আসার ক্ষেত্রে জাতীয় কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন। অবশ্যই দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা দেশে থেকেই বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন; আবার বাইরের দেশ থেকেও শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশে পড়তে আসবেন। ফলে এই খাতে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার যারা দেশের বাইরে যাচ্ছেন, তাদের জন্য দেশে যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে সম্ভব না হলেও, প্রকল্পভিত্তিক অথবা কম সময়ের জন্য পরামর্শদাতা হিসেবে তাদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ উপকৃত হতে পারে।

একই সঙ্গে দেশের বাইরের নামসর্বস্ব বা ভিসাসর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি ও ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচাতে এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সচেতন ও সাবধান করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি স্কলারশিপ ও আর্থিক সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হতে হবে। দেশের বাইরে যে কোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রবাসী শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশেরই সম্পদ। তাদের জ্ঞান, মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে আমাদের দেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যেতে পারবে।

সুমনা করিম: গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল জুনিয়র স্কুল, উত্তরার ভাইস প্রিন্সিপাল

News Link: প্রবাসী শিক্ষার্থীরা যে কারণে আমাদের সম্পদ (samakal.com)